মো. ইকবাল হোসেন, সাতকানিয়াঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম ১৫ (লোহাগাড়া -সাতকানিয়া আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতাকর্মীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কথায় কথায় বাকবিতণ্ডা গ্রুপিং এখন দৃশ্যমান। এ আসনে বিএনপি-জামায়াত ভোটে অংশ না নেওয়ায় আ. লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী ও স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রার্থী উপজেলা আ. লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেবের মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিনিয়ত হামলা, গুলি, ভাংচুরসহ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের ঘটনা ঘটছে উভয় পক্ষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাধ্যমে।
এরই প্রেক্ষিতে ২৪ ডিসেম্বর (রবিবার) সন্ধ্যায় নিজ নির্বাচনী কার্যালয় সাতকানিয়া পৌরসভাস্থ পরশমনি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আবদুল মোতালেবের সমর্থকরা। অপপ্রচার, মিথ্যাচার, চরিত্রহননের চেষ্টা ও নির্বাচনী কাজে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সমন্বয়কারী ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেছেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আ. লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পুরো দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। এখানে বিপ্লব বড়ুয়া নেত্রীর নির্দেশনার বাইরে কিছু করার সুযোগ নাই। এছাড়া তিনি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ভোটার নন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনার সাথেও কোনভাবেই সম্পৃক্ত নন। অথচ তাকে জড়িয়ে জনসম্মুখে কিছু বলা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ অতীতেও তার (নদভী) বিরুদ্ধে চরতি ইউনিয়নের একটি সভায় গীতাপাঠে বাধা দেওয়ার নজির রয়েছে। এছাড়া আমাকে (ডা. মিনহাজ) সন্ত্রাসীর গডফাদার আখ্যা ও বিপ্লব বড়ুয়াসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনার সাথে যুক্ত সম্মানিত ব্যক্তিদের ঢালাওভাবে মানহানীকর বক্তব্য নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্ন করার নামান্তর।
মিনহাজ আরও বলেন, নদভী অস্ত্র ও সন্ত্রাসী জড়ো করছেন এবং তার গাড়ির পেছনের গাড়িতে অস্ত্র রেখে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরপরও তিনি (নদভী) আমাকে সন্ত্রাসীদের গডফাদার বলছেন। মনে রাখতে হবে, মোতালেবের প্রধান শক্তি সন্ত্রাস নয়, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাধারণ ভোটার। নদভীর নিকট প্রশ্ন রেখে ডা.
মিনহাজ বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে আমি নদভীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক ছিলাম। জীবন বাজি রেখে তাকে জিতিয়েছি। তখনতো আমি মিনহাজ গডফাদার ছিলাম না, এখনকি ওই উপকারের পুরস্কার দিচ্ছেন, আমাকে গডফাদার বলে? অপর প্রশ্নের জবাবে ডা. মিনহাজ বলেন, নদভী শ্বেত সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোট চিনিয়ে নিয়ে বিজয়ের যে দিবাস্বপ্ন দেখছেন, তা সফল হবে না। আগামী ৭ জানুয়ারী মোতালেবের প্রধান অস্ত্র-সাধারণ ভোটাররা এক সঙ্গে ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে মোতালেবকে জেতাবেন। তখনই প্রমাণ হবে, অস্ত্র কি সাধারণ ভোটার নাকি অন্য কেউ। অভিযোগের বিষয়ে এমপি ড. আবু রেজা নদভী বলেন, নিজেরা সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া রক্ত ঝরিয়ে উল্টো আমার উপর দোষ চাপাচ্ছেন। যার কোনো ভিত্তি নেই। যা মিথ্যা ও বানোয়াট।
আরও পড়ুন বিজয় দিবসে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদে খতমে কুরআন ও আলোচনা সভা
সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মোতালেবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মেয়র মো. জোবায়ের, উপজেলা মহিলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা বেগম, আ. লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সন্তোষ কুমার মল্লিক, উপজেলা আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন, পৌরসভা আ. লীগ সভাপতি আবদুল গফুর লালু, উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আলহাজ শফিকুল ইসলাম, চেয়ারম্যান আবু ছালেহ, চেয়ারম্যান রমজান আলী, কাউন্সিলর মাসুমা বেগম ও আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট মো. শাহরিয়ারসহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত আটটায় উপজেলার চরতি ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা হয়েছে অভিযোগ করে শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করেছেন নৌকা প্রার্থী নদভী। তিনি অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে নৌকা ডুবাতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন আ. লীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা। নদভী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন সন্ত্রাস দমনে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমপি নদভীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন তার সহধর্মীনি ও বাংলাদেশ মহিলা আ. লীগ কেন্দ্রীয় সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী।
রিজিয়া রেজা চৌধুরী বলেন, নৌকার গণজোয়ার সহ্য করতে না পেরে স্বতন্ত্র প্রার্থীও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা করে। আমি প্রচারণায় গেলে তারা আমাকেও মেরে ফেলার জন্য হামলা করে। ঢাকায় বসে থাকা একজন গডফাদারের উস্কানিতে সাতকানিয়ায় রক্ত ঝরছে।
Leave a Reply